খেজুর কিভাবে খেলে উপকারিতা দ্রত পাওয়া যায়
আপনি কি জানেন? কিভাবে খেজুর খেলে দ্রুত উপকারিতা পাওয়া যায়। একজন মানুষের প্রতিদিন কতটুকু খেজুর খাওয়া উচিত? এবং খেজুরে কি কি গুনাগুন ও কার্যকারীতা রয়েছে? যদি না জেনে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা খেজুরের উপকারিতা ও গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করব। তবে আপনি যদি এর কার্যকারীতা না জেনে থাকেন, তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। তাহলে চলুন এবার আলোচনা শুরু করি।
পেজ সূচিপত্র: খেজুর খাওয়ার দ্রুত উপকারীতা
সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়
খেজুর প্রায় সকলেরই ফল জাতীয় খাদ্য তালিকার মধ্যে প্রিয় খাবার। এমন কেউ নেই যে খেজুর খেতে ভালোবাসে না । খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, আয়রন, জিংক, প্রোটিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবার। প্রকৃতি প্রদত্ত আমরা অনেক খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু এর সঠিক নিয়ম না জানার কারণে আমরা এগুলোকে আমাদের শরীরের জন্য তেমন কাজে লাগাতে পারিনা। তাই আমাদের খাবার গ্রহনের আগে খাবারের সঠিক নিয়ম গুলি জেনে নিতে হবে ।
আপনি কি জানেন? কেন খেজুুরকে সুপার ফুুড বলা হয়ে থাকে? খেজুরে প্রচুর পরিমানে ফাইবার ও ভিটামিন এবং এর অধিক কার্যকারীতার জন্য খেজুরকে সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে। তাহলে চলুন এবার, খেজুরের উপকারীতা এবং এর কার্যকারীতা কতটুকু সে সর্ম্পকে জানা যাক।
রক্তস্বল্পতাঃ- যদি কোনো মানুষের শরীরে রক্তস্বল্পতা অথাৎ, আয়রন কম থাকে তাহলে সেই ব্যক্তি যদি প্রতিদিন নিয়মিত ২টি থেকে ৩টি খেজুর খেতে পারে, তার শরীরে আয়রনের মাত্রা প্রচুর পরিমানে বেড়ে যাবে। এবং রক্তস্বল্পতার মতো কঠিন ব্যাধি দুর হয়ে যাবে। তবে আপনার যদি শ্বাষকষ্ট, হাটা চলায় ক্লান্তি বোধ করেন কিংবা রক্তে যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে এক্ষেত্রে আপনি যদি নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন তাহলে আপনার এই সকল সমস্যা গুলি দুর হয়ে যাবে।
বাতব্যাথাঃ- আজকাল আমাদের প্রায় সকলেরই বাতব্যাথা রয়েছে। আপনি কি জানেন? এই বাতব্যাথা কি কারনে হয়। দুইটি হাড়ের জয়েন্টের মধ্যে যে কার্টিলেসটা থাকে সেটা যখন ক্ষয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যাায় তখন আমাদের বাতব্যাথার মতো কঠিন ব্যাধিটি হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিদিন মাত্র ২ থেকে ৩টি খেজুর যদি খাওয়া যায় তাহলে আপনার বাথব্যাথা ভালো হয়ে যাবে।
উচ্চ রক্তচাপ ও নিম্ন রক্তচাপঃ- আমাদের নিয়ম মেনে খাবার না খাওয়ার কারণে আমরা শারীরিক ভাবে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে থাকি। যার কারণে আমাদের শরীরে উচ্চরক্তচাপ ও নিম্নরক্তচাপের মতো সমস্যা দেখা দেয়। নিম্নরক্তচাপের কারনে আমাদের শরীর দুর্বল, ক্লান্ত এবং নুয়ে যায়। তবে নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে নিম্নরক্তচাপ দুর হয়ে যাবে। এবং উচ্চরক্তচাপের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
চোখের সমস্যা দুর করেঃ- শরীরে যখন ভিটামিনের অভাব হয় তখন আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শরীরে যখন ভিটামিন এ- এর অভাব দেখা দেয় তখন চোখের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। চোখে কম দেখা রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, এবং ফাইবার ইত্যাদি। এক্ষেত্রে চোখের বিভিন্ন সমস্যা দুর করতে খেজুর গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি সকালে খালি পেটে মাত্র ২াট থেকে ৩টি খেজুর খেতে পারেন তাহলে আপনার এ সকল সমস্যাগুলি দুর হয়ে যাবে।
হাড় শক্ত করেঃ- সাধারণত মানুষের যখন ক্যালসিয়ামের অভাব হয় তখন শরীরের হাড় সমূহ ক্ষয়ে যায় বা দুর্বল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে খেজুর মারাত্নক কার্যকারী কাজ করে থাকে। খেজুরে থাকা ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, ও ফাইবার শরীরের ক্ষয়ে যাওয়া হাড়ের ক্ষয়পুরণ এবং হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে তোলে। অতঃএব আপনার দৈনিক ২ থেকে ৩টি বা ৪টি খেজুর খাওয়া তো উচিত।
কোষ্টকাঠিন্য দুর করেঃ- যখন আমাদের হজম শক্তি কমে যায় শরীরে ভিটামিনের অভাব হয় তখন কোষ্টকাঠিন্য রোগ হয়। আর এই কোষ্টকাঠিন্য থেকেই কিন্তু অশ্ব বা পাইলসের মতাে দীর্ঘমেয়াদী রোগ হয়ে থাকে। যার কারনে মলদ্বারে ব্যাথাকরে, জালাপোড়া করে, চুলকায়, নাড়ির ভেতরে মল জমে থাকা এই ধরনের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে আস্তে আস্তে শরীরের ভেতরে বড় ধরনের রোগ বাসা বাঁধে।
খেজুরে প্রচুর পরিমানে রয়েছে ফাইবার। খেজুর সেবনের ফলে খেজুরে থাকা এই ফাইবার আপনার শরীরে প্রবেশ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষ্টকাঠিণ্য ও অশ্ব পাইলসের মতো মারাত্মক ব্যাধি দুর করে দেয়। তবে আপনি যদি এই সকল সমস্যায় না ভূগতে চান সেজন্য আপনার খাদ্য তালিকায় অন্যন্ন খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত খেজুর খাওয়া উচিৎ।
দিনে কতটি খেজুর খাওয়া উচিত
এই আর্টিকেলে আমরা খেজুরের উপকারিতা ও গুণাগুন নিয়ে আলোচনা করেছি। খেজুর একটি অতি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। খেজুর খেতে সকলেই ভালোবাসে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে খেজুরের উপকারিতা ও গুণাগুণ কার্যবলি অথাৎ, ভিটামিন কতটুকু রয়েছে। এবং খেজুর খেলে আমাদের শরীরে কি ধরনের পরিবর্তন আসে।
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, বি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, প্রোটিন, আয়রন, জিংক, খনিজ, ও ফাইবার। এই ভিটামিনগুলি যেমন আপনার শরীর গঠনে অথাৎ, শরীরকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমনি আপনার শরীরের জন্য পষ্টিকর খাদ্যেরও প্রয়োজন। তাই আপনার দৈনিক খাদ্য তালিকার মধ্যে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে খেজুরকে সংযুক্ত করা প্রয়োজন।
তবে আপনার প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনটি অথবা চারটি খেজুর খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু খেজুর হতে হবে ভালো মানের, যেন ফরমালিন যুক্ত না হয়, তাহলে কিন্তু এর কার্যকারীতা বেশী পাবেন না।
আপনাদের কাছে খেজুরের কার্যকারীতা ও উপকার সম্পর্কে আরো একটি বিষয় বলে রাখি, যদি আপনি রাত্রিবেলায় দুই থেকে তিনটি খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে ভেজানো খেজুর সহ সেই পানি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে ম্যাজিকের মতো পরিবর্তন ঘটবে।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা- যাদের ক্ষেত্রে
আপনি কি জানেন ? খেজুরের যেমন উপকারী দিক রয়েছে, তেমনি এর অপকারী দিকও রয়েছে। যাদের কিডনি বিকল অথাৎ, যারা কিডনি জনিত সমস্যায় ভূগছেন তারা একদমই খেজুর খাবেন না। যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তারাও খেজুর খাবেন না কারণ, খেজূরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে গ্লকোজ। যা আপনার শরীরে চিনির মাত্রাটা বাড়িয়ে দিবে। ফলে আপনার ডায়াবেটিস আরো বেড়ে গিযে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
গর্ভবতী মায়েদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি, যারা গর্ভবতী মা রয়েছেন তারা যদি খেজুর খান তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেজুর খাবেন। কেননা, খেজুরের যেমন উপকারী দিক রয়েছে, তেমন কিছৃ অপকারী দিকও রয়েছে। তাই যেসব ক্ষতিকর দিক রয়েছে সেই দিক গুলো এড়িয়ে চলা।
আরো পড়ুন: আপনি কি অনলাইনে আয় করতে চান?
তাই প্রথমে খেজুুর খাওয়ার আগে খেজুরের উপকার ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।মনে করুন, আপনি খেজুরের উপকারী দিক গুলি জানেন। কিন্তু এর ক্ষতিকর দিকগুলো জানেন না। আপনি যদি প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমানে খেজুর খান তাহলে আপনার শরীরে যেটুকু উপকার হবে তার চাইতে বেশী ক্ষতি হবে। কারণ, খেজুরে রয়েছে অতিরিক্ত পরিমানে ফাইবার ও গ্লকোজ।
আপনার শরীরে কেবল যেই ভিটামিন যতটুকু প্রয়োজন সেই পরিমানে খাবার গ্রহন করা। প্রতি ২০০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে ৫৬৪ কিলোক্যালোরি তাহলে ১ গ্রাম খেজুরে ০.৩৫কিলোক্যালোরি পাওয়া যায় যা একটি খেজুরে প্রায় ৬০ থেকে ৯০ ক্যালোরির সমান। যেহেতু্ একটি খেজুরে এতো ক্যালোরি পাওয়া যায়, সেহেতু দৈনিক মাত্র কিয়েকটি খেজুরই আপনার শরীরের ক্যালোরি পুরণের জন্য যথেষ্ট। তাই অতিরিক্ত খাবারের ফলে আপনার শরীরে যাতে বিপরীত প্রতিক্রিয়া না ঘটে সেই অনুপাতে খাবার গ্রহন করা।
কোন খেজুর বেশী উপকারী জানুন
খেজুরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। কিন্তু কোন খেজুরে বেশী ভিটামিন রয়েছে সেটা আমাদের অনেকেরই অজানা। খেজুরের মধ্যে সবথেকে অন্যতম ভালো খেজুর হলো আজওয়া খেজুর। পুষ্টিবিদগণের ভাষানুযায়ী অন্যন্ন খেজুরের তুলনায় আজওয়া খেজুরে পুষ্টি বেশী পাওয়া যায়। কেননা এটা ছিলো মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রিয় খাবার। মুহাম্মদ (সঃ) এই খেজুর প্রতিদিনই খেতেন।
এমনকি, মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, এই আজওয়া খেজুর যদি কেউ প্রতিদিন দুইটি করে খেতে পারে, তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। এবং বড় ধরনের রোগগুলো থেকে সে মুক্তি পাবে। যেখানে মুহাম্মদ (সঃ) নিজে এই খেজুর খেয়েছেন, এবং এই খেজুরের মহাত্ম বর্ণনা করেছেন। সেখানে আমাদের তো অনায়াসেই খাওয়া চলে। তাই খেজুর হিসেবে আজওয়া খেজুরই আপনার জন্য সবথেকে ভালো হবে।
লেখক এর শেষে কথা
এই আর্টিকেলে খেজুরের উপকার এবং অপকার উভই দিক নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। খেজুরের কার্যকারীতা এবং এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে এই আর্টিকেলটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। আর যে সকল মানুষের ক্ষেত্রে খেজুর অপকারী দিক বেয়ে আনবে তাদের জন্য খেজুর না খাওয়ায় ভালো হবে।
তাছাড়া খেজুর নিয়মানুযায়ী খাওয়া উচিত। এই ধরনের স্বাস্থমূূলক টিপস পেতে এবং আরো অনেক অজানা তথ্য খুঁজতে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আশা করি এই তথ্যটি আপনার একটু হলেও কাজে আসবে। এতক্ষন এই আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য , এবং মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ।
গ্রীনল্যান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url