লাউশাকের ১৩টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা- গর্ভাবস্থায় লাউশাক খাওয়ার উপকারিতা

লাউশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা। আপনি কি জানেন লাউশাকে কি কি উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে এর কার্যকরী গুণাগুণ কতটুকু। এবং গর্ভাবস্থায় লাউশাক খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। যদি না জেনে থাকেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

লাউশাকের উপকারীতা ও অপকারীতা

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা লাউশাকের বিভিন্ন উপকারি ও অপকারি দিক সমূহ নিয়ে আলোচনা করব। এবং গর্ভাবস্থায় লাউশাক খেলে কি ধরনের উপকার পাওয়া যায় ও লাউশাকে কি কি ভিটামিন রয়েছে সেই দিকগুলি ‍নিয়ে আলোচনা করব, তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

পেইজ সূচিপত্রঃ

লাউশাকের ১৩টি কার্যকারী উপকারিতা-জেনে নিন

আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা লাউশাক খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানেনা। আবার অনেকেই জানতে চাই যে লাউশাকে কি ধরনের ভিটামিন থাকে ও শরীরের জন্য এইটা উপকারি কিনা। তাই আপনার যদি লাউশাক সম্পর্কে এতটুকুও জানার ইচ্ছা বা আগ্রহ থাকে এবং শারীরিক পরিবর্তনে এটা কতটুকু ভূমিকা পালন করে তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

লাউশাকের ১৩টি কার্যকারী উপকারিতা নিচে দেওয়া হলোঃ

  • দেহের গঠনে
  • রক্ত উৎপাদনে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
  • চোখের সমস্যায়
  • ভ্রুন ভালো রাখতে
  • যকৃতের সমস্যায়
  • হাড়ের ক্ষয়পূরণে
  • ডায়াবেটিস জনিত সমস্যায়
  • গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে
  • পেটের সমস্যায়
  • ওজন কমাতে
  • মস্তিষ্ক ভালো রাখতে
  • হার্ট ভালো রাখতে

দেহের গঠণেঃ আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিনের প্রয়োজন। আর লাউশাকে যেহেতু প্রচুর পরিমানে ভিটামিনে ভরপুর, তাই এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। এবং লাউশাকে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকায় হাড় শক্ত ও মজবুত করে এবং দেহের গঠণে সাহায্য করে।

রক্ত উৎপাদনেঃ অনেকের শরীরে রক্তের মাত্রা কম থাকে,তারা যদি নিয়মিত পনিমিত পরিমানে লাউশাক খেতে পারেন তাহলে তাদের শরীরে রক্তের মাত্রা বেড়ে যাবে। কারণ, লাউশাকে রয়েছে লোহিত রক্ত কণিকা ও হিমোগ্লোবিন যা শরীরে রক্ত তৈরীতে সাহায্য করে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ আমাদের স্বুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরে প্র্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কেননা শরীরে যদি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকে তাহলে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় রোগ শরীরে বাসা বাঁধবে। তাই প্রতিদিন লাউশাক খাওয়া উচিৎ।

চোখের সমস্যায়ঃ লাউশাকে প্রচুর পরিমানে রয়েছে ভিটামিন এ, ক্যারোটিন, লুইটেন, জিওজেন্থিন। যা চোখের রোগপ্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাই যদি লাউশাক খেতে পারেন তাহলে আপনার চোখের সমস্যা দুর হয়ে যাবে।

ভ্রুণ ভালো রাখতেঃ গর্ভবতী থাকা কালীন মা যদি লাউশাক খান, তাহলে মায়ের পেটে যে ভ্রূণ থাকে তার স্পাইনাল কর্ড ও ভ্রুণের মস্তিষ্ক এবং দেহ গঠণে সাহায্য করে।

যকৃতের সমস্যায়ঃ যদি কারো যকৃতের কোনো সমস্যা থেকে থাকে তবে সে যদি লাউশাকের রস করে প্রতিদিন ২ চামচ করে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর পর কয়েকদিন খেতে পারেন তবে তার যকৃতের সমস্যা ভালো হতে পারে।

হাড়ের ক্ষয়পূরনেঃ আমরা অনেকেই হাড়ের ক্ষয় জনিত সমস্যায় ভূগে থাকি। এক্ষেত্রে লাউশাক কার্যকারী ভূমিতা রাখে। যদি আমরা নিয়মিত লাউশাক খেতে পারি তাহলে আমাদের এই ধরনের সমস্যা দুর হতে পারে। কারণ, লাউশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা হাড়ের জন্য উপকারি।

ডায়াবেটিস জনিত সমস্যায়ঃ যাদের ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা রয়েছে তারা নির্ভয়ে লাউশাক খেতে পারেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য যেটা আপনার বেশি প্রয়োজন সেটা হলো আপনার শরীরে সুগারের পরিমানে কম থাকা। যাদ আপনার শরীরে সুগরের পনিমান কমে থাকে তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে।

আর যদি সুগারের পরিমান বেশি থাকে তাহলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে। তাই লাউশাকে এমন কিছূ উপাদান রয়েছে যা আপনার শরীরে সুগারের মাত্র কম রাখবে।

গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতেঃ অনেকের দেখা যায় গরমরে সময় শরীর প্রয়োজনের তুলনায় অনেক গরম থাকে। যা শরিীরের জন্য মোটেও ভালো না। তাই লাউশাক যেহেতু একটি রুচিশীল ও ঠান্ড খাওয়ার তাই এটি আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে। 

পেটের সমস্যায়ঃ যদি কারো পেটের সমস্যা থাকে তবে সে যাদি লাউশাকের এবং কচি ডগার রস করে ২ চামচ করে হালকা ঠান্ডা পানি দিয়ে কয়েকদিন খেতে পারেন তাহলে তার পেটের সমস্যা ভালো হয়ে যেতে পারে।

ওজন কমাতেঃ অনেকের দেখা যায় শরীরের ওজন জনিত সমস্যায় ভূগতে। এর কারণ, তাদের শরীরে ফ্যাট এবং কোলেস্টেরোল এর মাত্রা বেশি থাকা। আর লাউশাকে যেহেতু ফ্যাট এবং কোলেস্টেরোল এর মাত্রা কম থাকে তাই এটি আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

মস্তিষ্ক ভালো রাখতেঃ লাউশাকে যেহেতু প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি,আযরন, ফসফরাস, ফলিক এসিড, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং আরো অনেক ধরনের ভিটামিন থাকায়, এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এবং ভিটামিনের পরিমান বেশি থাকার কারণে, মস্তিষ্ক ভালো রাখে, এবং মস্তিষ্ক ডেভেলপে সাহায্য করে।

হার্ট ভালো রাখতেঃ আমাদের বেঁচে থাকার তাগিদে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যাঙ্গ ভালো রাখা অত্যান্ত জরুরী। তাই আমাদের শরীর স্বুস্থ্য রাখতে ভিটামিন যুক্ত খাবার বেশি বেশি গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে লাউশাক একটি কার্যকারী খাবার। আর আপনার যদি হার্টের কোনো সমস্যা থাকে তাহলে আপনি যদি লাউশাকের রস করে নিয়মিত কয়েকদিন খেতে পারেন। তাহলে আপনার হার্টের সমস্যা দুর হযে যেতে পারে।

লাউশাকে কি কি পুষ্টি গুন থাকে-জেনে নিন

লাউশাক সম্পর্কে উপরে বলা হয়েছে আমি আবারো বলছি, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে স্বুস্থ্যভাবে বেঁচে  জন্য প্রথমে যেটা বেশি দরকারী সেটা হলো শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। কারণ, আপনার যদি শরীরের রোগ প্রকিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে তাহলে যেটা হবে আপনার শরীরে কোনো ভয়াবহ রোগ বা যেকোনো রোগই হোক না কেন আপনার শরীরে বাসা বাধতে পারবেনা। আর যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের মারাত্নত ও ভয়াবহ রোগ হানা দিবে।

আরও পড়ুনঃ খেজুর কিভাবে খেলে উপকারীতা দ্রুত পাওয়া যায়

তাই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে ভিটামিন যুক্ত খাবারের কোনো বিকল্প নেই। সেই ভিটামিন যুক্ত খাবারের মধ্যে একটি হলো লাউশাক। কেননা লাউশাকে প্রায় সকল ভিটামিনে ভরপুর থাকে। তাছাড়া লাউশাক শরীরকে ঠান্ডা রাখে, দেহ গঠনে সাহায্য করে, মস্তিষ্ক ভালো রাখে, এবং ব্রেইন ডেভেলপে সাহায্য করে।  লাউশাকে কি কি পুষ্টিগুণ থাকে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো-

লাউশাকের পুষ্টিগুণের তালিকাঃ

উপাদান পরিমাণ
ভিটামিন এ ১৪৫০ আই ইউ
ভিটামিন সি ৩২ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম
আয়রন ১.১ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৬০ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ৮ থেকে ১০ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ৩১৫ মিলিগ্রাম
চিনি ০.৭ গ্রাম
চর্বি ০.১ গ্রাম
প্রোটিন ১.৫ গ্রাম
ক্যালোরি ২৫ থেকে ২৮ কিলোক্যালোরি
তাছাড়া লাউশাকে আরো অনেক উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। যেহেতু এতগুলো উপাদান একটি খাবার থেকই পাওয়া যায় । তাই লাউশাকের গুরুত্ব অনেক। অতএব আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকার মধ্যে লাউশাক রাখ অনেক ভালো। তাছাড়া লাউশাক এবটি রুচিশীল ও স্বুস্বাদু খাবার একটি।

লাউ শাকের উপকারিতা-সম্পর্কে জানুন

অনেকেই জানতে চান লাউ শাকে কি কি উপকার রয়েছে নাকি এটা ক্ষতিকর দিক বহন করে। হ্যাঁ, আজকে আমি লাউশাকের উপকারীতা ও অপকারীতা নিয়ে আলোচনা করব। লাউশাক একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর, ভিটামিন যুক্ত রুচিসম্মত ও স্বুস্বাদু খাবার লাউশাক দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরীতে সাহায্য করে এবং শরীরকে অনেক বড় ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে। অতএব লাউশাকের উপকারীতা অনেক। তবে লাউশাকের যেমন উপকারি দিক রয়েছে 

তেমন এর ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। লাউশাক যদি আপনি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বেশি খান তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। লাউশাক অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। তাই লাউশাক পরিমিত পসিমানে খাওয়া উচিৎ। লাউশাক সকলেই খেতে পারবেন। তাছাড়া লাউশাকে রয়েছে ফলিক এসিড যা মায়ের গর্ভে থাকা শিশূর জন্য স্পাইনাল কর্ড তৈরীতে এবং দেহ গঠনে সাহায্য করে ।

লাউশাকে কি কি অপকারিতা রয়েছে

এতক্ষন আমরা লাউশাকের উপকারিতা জানলাম। এইবার আমরা জানব লাউশাকের অপকারিতা সম্পর্কে। লাউশাক যেমন উপকারি দিক বহন করে তেমন লাউশাক অপকারি দিকও বহন করে। আপনি যদি আপনার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমানে লাউশাক খান তাহলে আপনা  শরীর বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হবে । তাই লাউশাক পরিমিত খাওয়ায় ভালো। লাউশাকের অপকারিতা নিচে দেওয়া হলো-

  • যাদের এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য লাউশাক ক্ষতিগকর দিক বহন করবে।এর কারণে আপনার শরীরে চুলকানী, শ্বাসকষ্ট ও চোকের সমস্যা হতে পারে।
  • লাউশাকে প্রচুর পরিমানে এনজাইম থাকার কারনে এটি আপনার শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে এবং আপনার পেটের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। বেশি লাউশাক খাওয়া একেবারেই না।
  • লাউশাকে ক্যালসিয়াম থাকার কারনে এটি যেমন আপনার হাড় মজবুত করবে। তেমনিভাবে  এতে অক্সাইড থাকার কারনে হাড়ের ক্ষয় জসিত সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিবে।

গর্ভাবস্থায় লাউশাক খাওয়ার উপকারিতা

লাউশাক পুরুষ ও মহিলা উভয়েই খেতে পারবেন। তবে মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় খাওয়া অনেক উপকারী। গর্ভাবস্থায় থাকা কালীন কোনো মা যদি লাউশাক খেতে পারেন তাহলে তার যেমন শরীরের উপকার হবে তেমন তার গর্ভে থাকা শিশুর পক্ষেও ভালো হবে। কারণ, এতে ফলিক এসিড থাকার কারনে এটি শিশুর স্পাইনাল কর্ড ও দেহের গঠনে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবতী মায়ের প্রতিদিন পরিমিত লাউশাক খাওয়া উচিৎ। কিন্তু বেশি খাওয়া যাবেনা অন্যথায় এটা ক্ষতির কারণ হবে।

আমাদের শেষ কথা

এতক্ষন আমরা লাউাশাকের বিভিন্ন উপকারিতা ও অপকারীতা সম্পর্কে জানলাম যে লাউশাকে কি কি উপকার রয়েছে,কতটুুকু পরিমানে গুষ্টিগুণ রয়েছে। এটি আমাদের শরীরে কতটুকু উপকারি। এবং লাউশাকে কি কি অপকারিতা রয়েছে। সেই সম্পর্কে জানতে পারলাম। তবে আপনার উচিৎ হবে লাউশাক পনিমিত পরিমানে খাওয়া। তাহলে আপনার শরীরে কোনো ধরনের সমস্যা হবেনা  এবং আপনার শরীরকে ভালো রাখবে। 

এই আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোনো ভূল থেকে থাকে তাহলে আপনারা আমাদের কমেন্ট বক্স থেকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা তা সংশোধন করার চেষ্টা করব। এতক্ষন আমাদের এই আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য এবং আর্টিকেলটি ভালো করে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই রকম আরো উপকারী টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। ধন্যবাদ,,

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্রীনল্যান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url