গর্ভাবস্থায় কি কি ফল ও সবজি খাওয়া যাবেনা - জেনে নিন

একজ গর্ভবতী মায়ের গর্ভধারণকালীন সময়ে নিজেকে সেফ রাখাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং গর্ভকালীন সময়ে কোন কোন খাবারগুলো খেলে নিজের এবং গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে তা আগে থেকে জেনে রাখতে হবে। তবে চলুন সে বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

গর্ভাবস্থায়-কি-কি-ফল-ও-সবজি-খাওয়া-যাবেনা

আজকের আর্টিকেলে গর্ভকালীন সময়ে কোন কোন সবজি ও ফল খাওয়া যাবেনা সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হবে। তবে আপনি যদি জানতে আগ্রহী থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। চলুন এবার আলোচনা শুরু করি।

সুচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় কি কি ফল ও সবজি খাওয়া যাবেনা

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না গর্ভধারণকালীন সময়ে প্রতিটি মায়ের সে বিষয়গুলো জেনে থাকা অনেক জরুরী একটি বিষয়। যদিও এই সময়ে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি সবুজ শাক-  সবজি ও ফলমুল বেশি বেশি করে খাওয়ার তাগিদ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ গর্ভকালীন সময়ে একজন মা ও তার গর্ভে দিনে দিনে বেড়ে ওঠা সন্তানের

শারীরিকভাবে বিকাশিত হওয়ার ক্ষেত্রে পুষ্টিকর ও ভিটামিন জাতীয় খাবারের কোনো বিকল্প নেই। আর বিভিন্ন শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন খনিজ ও মিনারেল নিহিত থাকে। তবে সবজির ভিতরে যে কিছু কিছু নিষিদ্ধ সবজি রয়েছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে না তা আমরা অনেকেই জানিনা আর না জানার কারণে গর্ভবতী মায়েরা গর্ভধারণকালীন সময়ে

আরও পড়ুনঃগর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়

সেই নিষিদ্ধ খাবারগুলি খাওয়ার কারণে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে এমনকি গর্ভপাতেরও আশঙ্কা থাকে। তাই একজন গর্ভবতী নারীর নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এবং গর্ভের সন্তানের শারীরিক বিকাশে ও ওজন ঠিক রাখতে এবং অকাল গর্ভপাত থেকে বাঁচতে সেই খাবারগুলি পরিহার করা উচিত। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই নিষিদ্ধ সবজিগুলো কি কি যেগুলো খেলে গর্ভাবস্থায় মারাত্মক সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়।

কুমড়াঃ কুমড়া যদিও একটি পুষ্টিকর খাবার কিন্তু এটি অনেক ঠান্ডা যা খেলে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। যেহেতু কুমড়া একটি ঠান্ডা খাবার তাই গর্ভাবস্থায় কুমড়া খেলে গর্ভবতী মায়ের ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। আর গর্ভবতী মায়ের যদি ঠান্ডা লেগে যায় তাহলে গর্বের বাচ্চাটিও নানাবি সমস্যা সম্মুখীন হতে পারে এমনকি বাচ্চা জন্মের পরেও ঠান্ডা জনিত সমস্যা যেমন নিউমানিয়ার ভুগতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কুমড়া না খাওয়াই ভালো।

কাঁচা বরবটিঃ বরবটি একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার হলেও গর্ভাবস্থায় বরবটি না খাওয়াই ভালো কারণ কাঁচা বরবটিতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যেমন ই কলি ও সালমোনেল্লা ছাড়া আরো অনেক ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকে আর এই ব্যাকটেরিয়া গুলো শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর এবং গর্ভপাতের জন্য দায়ী। তাই গর্ব অবস্থায় কাঁচা বরবটি কোনভাবে খাওয়া যাবেনা

পেঁপেঃ বহু পুষ্টিগুণে ও ভিটামিনে ভরপুর পেঁপে যা খেতে ছোট থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই পছন্দ করে। কাঁচা পেঁপে রান্না করেও খাওয়া যায়। তবে পাকা পেঁপেতেও এর চাইতে বেশি ভিটামিন নিহিত থাকে। কিন্তু পেঁপেতে ল্যাট্রেক্স নামে এক ধরনের পদার্থ থাকায় এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে ফলে মায়ের পেট ব্যথার লক্ষণ সহ শিশুরও নানাবিধ সমস্যা হতে পারে।

তাই গর্ভাবস্থায় পেঁপে এড়িয়ে চলতে হবে। আর গর্ভধারণের সময়কালটা একটি মায়ের জন্য সতর্কতা মেনে চলা অনেক জরুরী। কারণ, এই সময় মায়ের যেকোনো কারণে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। তাই যেকোনো খাবারের প্রতি ও বিভিন্ন কাজের প্রতি সতর্কতা ‍ও সাবধাণতা মেনে চলা উচিৎ।

গর্ভাবস্থায়-কি-কি-সবজি-খাওয়া-যাবেনা

বেগুনঃ আলু দিয়ে বেগুনের ঘন্ট বিভিন্ন ছোট ও বড় মাছের সাথে বেগুন রান্না, বেগুনের কালিয়া, বেগুনের চপ, এবং বেগুন ভাজা খেতে অনেকে পছন্দ করলেও বেগুনের মধ্যে অনেক অপকারিতা বিদ্যমান এবং এলার্জির একটি প্রধান উৎস। বেগুন খেলে এলার্জির সমস্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায় এবং যাদের এলার্জি আগে থেকেই আছে তাদের

এলার্জির সমস্যা খুব ঘন ঘন দেখা দেয়। আর গর্ভাবস্থায় তো কোন মতেই বেগুন খাওয়া যাবে না কারণ, বেগুনে অনেক ফাইটোহরমোন্স থাকে। যা গর্ভাবস্থায় খেলে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এমনকি এলার্জিজনিত সমস্যায় ভুগতে হয় সে ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় বেগুন না খাওয়ায় আপনার জন্য উত্তম হবে।

কাঁচামুলাঃ আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছে যারা মুলাখেতে অনেক ভালোবাসে সেটা হোক কাঁচা অথবা রান্না করা। কিন্তু মুলার মধ্যেও অনেক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে যেমন লিস্টেরিয়া, সালমোনেল্লা ও ই কলি। যেই ব্যাকটেরিয়া গুলো শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে শরীরে নানা ধরনের রোগ জন্ম নেই। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় কাঁচামুলা খেলে

এর মধ্যে থাকা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া গুলো প্রথমে মায়ের শরীরের প্রবেশ করে পরবর্তীতে মায়ের গর্ভে থাকা বাচ্চাটির শরীরে প্রবেশ করে ফলে বাচ্চার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং শারীরিক বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে এমনকি মায়ের অকাল গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় মুলা খাওয়া যাবেনা। এমনকি মোলা খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাসট্রিকের সমস্যাও হতে পারে।

করলাঃ করলার মধ্যেও অনেক উপকারী উপাদান থাকে যা মানুষের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং পুষ্টির যোগান দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। করলা স্বাদ সাধারণত তেতো হয়। তবে করলায় প্রচুর গ্লাইকোলাইসিস ও সেপোনিক নামক এক ধরনের পদার্থ থাকে যা সাধারণের তুলনায় গর্ভাবস্থায় খেলে গর্ভবতী মায়ের অনেক

আরও পড়ুনঃগর্ভাবস্থায় লালশাক খাওয়ার উপকারিতা

সমস্যা হতে পারে তাই সকল সমস্যা ঠেকাতে করলা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে যদি অতিরিক্ত করলা খাওয়ার ইচ্ছে হয় সেক্ষেত্রে খুব অল্প পরিমানে করলা খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবেনা ইতোমধ্যে তা আমরা জানলাম এখন আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না। গর্ভাবস্থায় বিশেষজ্ঞরা ফল খাওয়ার তাগিদ দিয়ে থাকেন কারণ ফলে রয়েছে ব্যাপক পরিমাণে ভিটামিন। যা মানব দেহের প্রত্যেকটি ভিটামিনের অভাব পূরণ করে থাকে তবে ফলের মধ্যেও যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি

কিছু কিছু ফল রয়েছে যেগুলোর মধ্যে উপকারিতা থাকলেও অপকারিতা বিদ্যমান রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবেনা। কারণ গর্ভাবস্থায় খেলে গর্ভবতী মা ও গর্ভে ধারণকৃত সন্তানেরও মারাত্মক সমস্যা হতে পারে এমনকি মায়ের অকাল গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। তবে চলুন জেনে নিই সেই নিষিদ্ধ ফল গুলো কি কি।

কাঁঠালঃ কাঁঠাল একটি সুস্বাদু পুষ্টিকর ফল হলেও এর মধ্যে কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কাঁঠাল যেহেতু একটি ভারী খাবার সেহেতু এটি দ্রুত হজম হয় না এবং কাঁঠালের মধ্যে এলার্জিও রয়েছে। আর গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় হজম ক্ষমতা ঠিক থাকাটা অনেক জরুরী কারণ হজম শক্তি যদি কমে যায় তাহলে যেই খাবারই খাওয়া হোক না কেন তা দ্রুত হজম হবে না ফলে

পেটের মধ্যে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হবে যেমন বমি বমি ভাব, পেটব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, ও পেটফাঁপা, এছাড়া আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর গর্ভবতী মায়ের গর্ভধারণকালীন সময়ে শরীরের ওপর যদি কোনো খারাপ ইফেক্ট পড়ে তাহলে তার প্রভাব গর্ভের সন্তানের ওপরও পতিত হতে পারে।

তাই গর্ভের বাচ্চার উপরে যেন কোন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে অতএব যেই খাবারগুলো গর্ভাবস্থায় নিষিদ্ধ সেই খাবারগুলো কেবলমাত্র নিষিদ্ধ খাবারের তালিকায় রাখতে হবে।

ফরমালিনযুক্ত ফলঃ যে কোনো অবস্থাতেই ফর্মালিনযুক্ত ফল খাওয়া যাবেনা এটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়তো একদমই নয়। কারণ, দীর্ঘদিন যাবৎ ফর্মালিন দিয়ে ফলকে সংরক্ষণ করে রাখার কারণে ফলের মধ্যে অনেক ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার জন্ম হয় যা মানব দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আর গর্ভাবস্থায় যদি সেই ব্যাক্টেরিয়াগুলো শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে তাহলে ব্যাক্টেরিয়ার প্রভাবে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য হানির ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং মায়ের অকাল গর্ভপাতের কারণও হতে পারে।

তরমুজঃ তরমুজ একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। তরমুজের মধ্যে শতকর প্রায় ৯৫% শতাংশই পানি থাকে যা ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ শরীরের পানি শুন্যতা রোধ করতে এবং শরীরের মধ্যে থেকে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর ও বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থগুলো বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই তরমুজ। তাছাড়া তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় এটি 

চোখের জ্যোতিশক্তি বাড়াতেও ব্যাপক ভুমিকা রাখে। কিন্তু তরমুজ অনেক পুষ্টিকর হওয়া সত্ত্বেও গর্ভাবস্থায় তরমুজ না খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, তরমুজ একটি ঠান্ডা ফল যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে  ঠান্ডা সর্দি ও কাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

লাল চেরী ফলঃ লাল চেরী ফলে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমিয়ে দেয় ফলে রক্ত উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর যদি আগে থেকেই আপনার ডায়াবেটিস থাকে তাহলে কখনেই চেরী ফল খাবেননা এতে আপনার ডায়াবেটিস আরও বেড়ে যাবে। আর অতিরিক্ত পরিমাণে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার ফলে আপনি বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

আধোয়া অপরিষ্কার ও ছাল না ছাড়ানো ফলঃ এমন কিছু ফল আছে যেগুলো ছাল ছাড়িয়ে খেতে হয় যেমন- কলা, কমলা, পেঁপে, বেদানা, ড্রাগন ইত্যাদি। আর বাজার থেকে সরাসরি কিনে নিয়ে আসা ফলে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ ও ব্যাক্টেরিয়া থাকে যে ব্যাক্টেরিয়াগুলো বিভিন্ন ধরনের বড় বড় রোগ বহন করে। আর গর্ভাবস্থায় এই ব্যাক্টেরিয়গুলো 

শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে মায়ের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার বিরূপ প্রভাব গর্ভের শিশুর ওপর তরান্বিত হয় ফলে শিশুর শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে যার কারণে শিশু বিভিন্ন প্রতিবন্ধীরূপে জন্মগ্রহণ করতে পারে এমনকি মায়ের অকাল গর্ভপাতও এর জন্য দায়ী।

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবেনা তা উপরের অংশে আলোচনা করা হয়েছে এখন গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। প্রত্যেকটি সবজির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ও ভিটামিন নিহত থাকে যেগুলো মানব দেহের জন্য অনেক উপকারী তবে কিছু কিছু সবজি আছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কারণ যে সবজিগুলো গর্ভাবস্থায় নিষিদ্ধ বা খাওয়া যাবেনা সেগুলো যদি গর্ভাবস্থায় খাওয়া হয় তবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বা রোগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে নিষিদ্ধ সবজি ব্যতীত অন্যান্য যে সকল সবজিগুলি আছে সেগুলো অনায়াসে খাওয়া যায় এবং শরীরের সকল পুষ্টি ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কোন কোন সবজি খাওয়া যায়।

ফুলকবিঃ শীতকালীন সবজি ফুলকবিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, থাকে। আর গর্ভাবস্থায় ফুলকবি খেলে যদি গর্ভবতী মায়ের শরীরে কোন ভিটামিনের ঘাটতি থাকে তাহলে তা পূরণ হয়ে যায় পাশাপাশি গর্ভরত শিশুর শারীরিক বিকাশ ঘটায় হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে, চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ সহ ব্রেইন ডেভেলপে সাহায্য করে।

বাঁধাকপিঃ বাঁধাকপিতেও ভিটামিন সি, ও ভিটামিন এ ,ব্যাপক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে যা একটি সাধারন মানুষসহ গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রেও অনেক উপকারি এবং শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। সাধারণত ভিটামিন এ, এর অভাবে শিশুর রাতকানা রোগ হয়। এবং গর্ভবতী মায়েরও ভিটামিন এ, এর অভাবে শরীরের 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় দৃষ্টি শক্তি কমে যায়। অতএব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং দৃষ্টি শক্তি প্রখর করতে এবং গর্ভের সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিক রাখতে গর্ভাবস্থায় এই শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি খাওয়া উচিত।

মিষ্টি কুমড়াঃ গর্ভাবস্থায় মিষ্টি কুমড়া খাওয়া যায় মিষ্টি কুমড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে যা একটি মায়ের জন্য গর্ভাবস্থায় বিশেষ প্রয়োজন।

টমেটোঃ টমেটো হল ভিটামিনের একটি উৎস টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। টমেটো সাধারণত টক স্বাদযুক্ত সবজি টমেটো খেলে শরীরের মধ্যে জমে থাকা ময়লা বিষাক্ত তরল ও টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি করে।

টমেটোতে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, ভিটামিন বি৬, বি১২, ভিটামিন ডি, জিংক, ফাইবার, সাইট্রিক এসিড, ম্যালিক এসিড ইত্যাদি। এই সাইট্রিক এসিড এবং ম্যালিক এসিড টমেটোতে টক ভাব এনে দিতে সাহায্য করে যার কারণে আমরা টমেটো খেলে টক ভাবটা বুঝতে পারি। তবে এই এসিড গুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী বিশেষ করে

গর্ভাবস্থায় টমেটো বেশি বেশি খাওয়া ভালো। টমেটোতে থাকা এই ভিটামিন এবং এসিড গুলি দেহের সকল ধরনের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম এবং গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভরত শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাছাড়া লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পালং শাক, আলু, ওলকপি, গড় আলু, ইত্যাদি সকল সবজি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায়। এক কথায় যে সকল সবজি গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিষিদ্ধ সেই সকল সবজি ব্যতীত বাকি সব সবজিগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায় এবং এগুলোর উপকারিতা অনেক আর এই এ সকল সবজি গুলো বেশি বেশি করে খেতে হবে।

কারণ এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে যা দেহের ভিটামিনের চাহিদা গুলো পূরণ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে হাড় শক্ত ও মজবুত করে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এছাড়াও শিশুর ব্রেন ডেভেলপে শারীরিক ও মানুষের বিকাশে হাড় শক্ত ও মজবুত করতে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে

গর্ভধারণের প্রথম তিন থেকে চার মাস একজন গর্ভবতী মায়ের কাছে একটা মূল্যবান সময় এ সময় তাকে অনেক সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হয়। কারণ, একটু অসতর্কতাই হতে পারে একটি বড় দুর্ঘটনার কারণ ঘটে যেতে পারে অকাল গর্ভপাত। তবে গর্ভাবস্থায় ভালো ভালো খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা কিন্তু

যে সকল ফলগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া ঠিক নয় যেগুলো খেলে ক্ষতি হতে পারে সেগুলো ব্যতীত সকল ফল খাওয়া চলে। আর ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি ভিটামিন প্রোটিন ও পুষ্টির প্রয়োজন পড়ে কারণ সেই সময় তিনি একা নন বরং তার ভিতরেও দিনে দিনে বড় হয়ে ওঠে নতুন একটি প্রাণ।

আরও পড়ুনঃগর্ভাবস্থায় লাউশাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস বাচ্চার জন্য তেমন কোন খাবারের প্রয়োজন পড়ে না অল্প খাবারে হয়ে যায়। দ্বিতীয় তিন মাসে হালকা বেশি করে খাবারে প্রয়োজন পড়ে এবং শেষে তিন মাসে অনেক বেশি বেশি খাবার গ্রহণ করতে শুরু করে। খাবার কম হয়ে গেলে এবং পুষ্টির অভাব হলে বাচ্চা নানাবিধ সমস্যায় ভোগে থাকে

গর্ভাবস্থায়-কি-কি-ফল-খাওয়া-যায়

এমনকি পুষ্টির অভাবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী রূপে জন্মগ্রহণ করতে পারে। তাই বাচ্চার পরিপূর্ণ পুষ্টির চাহিদা পূরণে গর্ভবতী অবস্থায় পরিমাণ মতো পুষ্টিকর ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে এই পুষ্টি, ভিটামিন ও প্রোটিন গুলি বিভিন্ন ফল থেকেও পাওয়া যায় যেমন-

বেদানাঃ অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর ভিটামিনে পরিপূর্ণ একটি ফল হল বেদানা। বেদানার প্রায় সকল ভিটামিন বিদ্যমান থাকে। বেদনায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে রক্ত উৎপাদনের সহায়তা করে। পাশাপাশি রক্ত পরিষ্কার করে এবং রক্ত থেকে ময়লা ও ক্ষতিকর তরল গুলো বের করে দেই।

বেদানাই ভিটামিন এ, সমৃদ্ধ থাকায় দেহে সকল রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রাতকানা রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে।

আপেলঃ আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও পানি থাকে যা লম্বা হতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় আপেল খেতে পারেন এতে আপনার শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শিশুর শারীরিকভাবে লম্বা হওয়া সহ শিশুকে সুস্থ ও সাবলীল রাখতে সক্ষম।

কমলাঃ বিশেষজ্ঞরা একটি পরীক্ষায় কমলা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে কমলাতে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যেগুলো অনেক বড় বড় রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। কমলাতে শতকরা প্রায় ৯০% পানি থাকে যা আমাদের শরীরের প্রায় সকল ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করে। শুধু গর্ভাবস্থায় নয় যে কোন অবস্থাতেই কমলা খাওয়া যায়।

এছাড়াও কিসমিস, পেয়ারা, এভোকেডো, জামরুল, লটকন, ডাব, বাদাম, কাজুবাদাম, শুকনা খেজুর, ইত্যাদি সকল ফল গর্ভাবস্থায় খাওয়ার ব্যাপক উপকারিতা লক্ষণীয়। তবে নিষিদ্ধ ব্যতীত সকল ফল আপনি গর্ভাবস্থায় খেতে পারেন। কিন্তু যে কোন খাবারই হোক না কেন অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন না কারণ অতিরিক্ত খাবার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর এতে

উপকারিতা পাওয়া তো দূরের কথা বরং আপনার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের কারণে বদ হজমের সমস্যা বেশি হয় এবং পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই অতিরিক্ত খাবার থেকে বিরত থাকবেন এবং পরিমাণ মতো খাবার গ্রহণ করবেন।

গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবেনা - বিস্তারিত জেনে নিন

প্রেগন্যান্সির সময়টা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটা সময় যদি আপনি গর্ভকালীন সময়ে নিজেকে সাবধানতার সহিত রাখতে না পারেন। একটু অসাবধাণতার কারণে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হতে পারেন এবং আপনার গর্ভের বাচ্চাটিও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে অথবা ঘটে যেতে পারে আপনার অকাল গর্ভপাত। ফলে আপনার প্রচুর পরিমাণে

ব্লিডিং হতে পারে এবং আপনি রক্ত শূণ্যতায় ভূগে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারেন। আর এই সময়ে এই ধরনের সমস্যা অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে বা ঘটতে দেখা যায়। তাই গর্ভকালীন সময়ে নিজেকে সেফ রাখাটা অনেক জরুরী। এই সময়ে অবশ্যই বিভিন্ন খাবারের প্রতি ও বিভিন্ন কাজ কর্মের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে যেন শরীরের ওপর কোনো চাপ না পড়ে।

আর গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে এবং কি কি খাওয়া যাবেনা সকল তথ্যদি ওপরে আলোচনা করা হয়েছে। তবে আপনার সুবিধার্থে আমি আবারও গুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরলাম। গর্ভাবস্থায় আম, কাঁচা ছোলা, নাশপাতি, এ্যাভোকেডো, আপেল, কমলা, বেদানা, কিসমিস, শুকনো খেজুর, গাজর, শশা, খিরা, মিষ্টি আলু,

টাটকা হালকা গরম করা দুধ, মধু,  কালো জিরা, এবং শাকসবজির মধ্যে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, কটুশাক পালংশাক, কলমিশাক, শুশুনিশাক, সজিনাশাক, গিমাশাক, টমেটো, ফুলকপি, বাধাঁকপি, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গ, ওলকচু, ইত্যাদি খাওয়া যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ পাস্তরায়িত দুধ, সেই দুধ থেকে তৈরী ছানা মাঠা এবং পনির, ফর্মালিন বা

প্রিজারভেটিভ দিয়ে রাখা বিভিন্ন সবজি, ফলমুল, এবং বিভিন্ন কৌটাজাত খাবার, অসেদ্ধ ও অছেলানো না ধোয়া কোনো খাবার কোনোভোবেই খাওয়া যাবেনা। কারণ, এতে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক ও ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া থাকতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য ব্যপক ক্ষতিকর এবং বিভিন্ন রোগ তৈরীর উৎস।

লেখকের শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল ও সবজি খাওয়া যাবেনা এবং গর্ভাবস্থায় কি কি ফল ও সবজি খাওয়া যাবে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে আপনি যদি জেনে না থাকেন যে গর্ভাবস্থায় কোন ফল ও সবজি খাওয়া যাবে এবং কোন ফল সবজিগুলো খাওয়া যাবেনা সেক্ষেত্রে আমাদের লেখা এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন তাহলে আশা করি আপনি আপনার উত্তরগুলি পেয়ে যাবেন।

তবে একটি কথা মনে রাখবেন আমরা সার্বক্ষণিক আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকি এবং অনেক রিসার্চ ও যাচাই-বাছাই করার মাধ্যমে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে এই ধরনের সেবামূলক আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করি। অতএব এই আর্টিকেলে যদি কোনো ভূল থাকে তাহলে ভুল ক্ষমা করবেন এবং এই ধরনের আরো সেবামূলক আর্টিকেল পেতে

আমাদের এই ওয়েবসাইটটি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন। এতক্ষণ আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ার জন্য এবং এ আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্রীনল্যান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url